
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল ঈদের আমেজ। কেমন ছিল ভালোবাসার গল্পকথকের এবারের ঈদ আয়োজন? বলছি, মিজানুর রহমান আরিয়ানের কথা! যার প্রতিটা নাটক বা টেলিফিল্মই দর্শকদের মাঝে এক অন্যরকম জায়গা করে নেয়। তিনি যেমন ভালোবাসার গল্প বলেন, দর্শকদের হৃদয়ে তাঁর জায়গাটাও ভালোবাসার।
গত ঈদে ‘বড় ছেলে‘ নাটকটির মধ্য দিয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছেন কোটি দর্শকের কাছে। বলতে গেলে, বাংলা নাটকের জগতে যেটি একরকম ইতিহাস। এ পর্যন্ত ইউটিউবে বড় ছেলে নাটকটি দেখা হয়েছে ২কোটি বারেরও বেশি! এর আগেও তাঁর প্রতিটি কাজ ছিল অনন্য। তবে ‘বড় ছেলে’ প্রকাশের পর দর্শক মনে তাঁর জায়গাটি যেমন বেড়েছে, তাঁর প্রতি দর্শকদের প্রত্যাশাও বেড়েছে বহুগুন। তাই এ বছরে তাঁর পরিচালিত নাটক/টেলিফিল্মগুলো দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল দর্শকরা। অবশেষে, এই ঈদে একে একে প্রচারিত হয়েছে তাঁর সব কয়টি ঈদ স্পেশাল নাটক এবং টেলিফিল্ম। বরাবরের মতই তিনি ছুঁয়ে গেছেন দর্শকদের হৃদয়।
তো চলুন এক নজরে দেখে নিই, কেমন ছিল এবারের ঈদে মিজানুর রহমান আরিয়ানের ঈদ নাটক গুলো…
২২শে এপ্রিল (Baishey April)

মিজানুর রহমান আরিয়ান এবং তাঁর নির্মাণশৈলী দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকা দর্শকদের ঈদ শুরু হয়েছিল ‘২২শে এপ্রিল‘ দিয়ে। গত বছরের সাড়া জাগানো কাজ ‘বড় ছেলে’ -এর মতই এবারে আলোড়ন তুলেছে তাঁর পরিচালিত টেলিফিল্ম “২২শে এপ্রিল”। প্রচারের পর নয়, বরং টিজার প্রকাশ এবং এ সংক্রান্ত নিউজ প্রকাশের পর থেকেই দর্শকদের মাঝে আলোচনায় আসে টেলিফিল্মটি। বাবা-মেয়ের গল্প, পরিবারের গল্প, অভিমানের গল্প, মিষ্টি প্রেমের গল্প, প্রতিবাদী নারীর গল্প! অনেকগুলো গল্প মিলিত হয়েছে একই গল্পে, একই স্থানে, একই দিনে। বাকি গল্পটা সবারই এক রকম। মূলত, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বনানীর অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই টেলিফিল্মটি তৈরি করেছেন নির্মাতা আরিয়ান। ফলে, বাস্তবে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি ‘বড় ছেলে’ খ্যাত আরিয়ানের ফ্রেমে কিভাবে উঠে আসে, তা দেখতেই অপেক্ষায় ছিল দর্শকরা। আর বরাবরের মতই, তাঁর ফ্রেম কাঁদিয়েছে দর্শকদেরকে।
সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক দর্শকের মতে, লাখ লাখ দর্শককে কাঁদানো ‘বড় ছেলে’ নাটকের চেয়ে ‘২২শে এপ্রিল’ অনেক বেশি কাঁদিয়েছে তাঁদেরকে। যদিও এ বছর আলোচিত এই কাজটি রিলিজ করা হয়নি ইউটিউবে। সরাসরি এনটিভির পর্দায় ঈদের দ্বিতীয় দিনে প্রচার করা হয় ‘২২শে এপ্রিল’। এতো ভাল মানের একটি টেলিফিল্ম ইউটিউবে রিলিজ না দেওয়ায় অনেক দর্শকই ক্ষোভ জানিয়েছেন ফেসবুকে। তবে যারা ইতিমধ্যে টেলিফিল্মটি দেখে ফেলেছেন। প্রায় প্রত্যেক দর্শকের মতেই, এবারের “২২শে এপ্রিল” ছিল মন ছুঁয়ে যাওয়া একটি টেলিফিল্ম। বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে টেলিফিল্মটি তৈরি হওয়ায় এর গ্রহনযোগ্যতা ছিল অনেক বেশি। এছাড়াও বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে ছিল, এক ফ্রেমে এক ঝাঁক তারকা। ২২শে এপ্রিলে অভিনয় করেছেন ইরেশ যাকের, অপূর্ব, মনোজ প্রামাণিক, মেহজাবিন চৌধুরী, মাসুমা রহমান নাবিলা, তানজিন তিশা দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, শহিদুল আলম সাচ্চু, রাশেদা চৌধুরী, দীপা খন্দকার, তামিম মৃধাসহ আরও অনেকে। যারা প্রত্যেকেই ছোট পর্দার দর্শকদের কাছে অনেক জনপ্রিয় এবং পরিচিত মুখ। সব মিলিয়ে, নিঃসন্দেহে এবারের ঈদে মিজানুর রহমান আরিয়ানের সেরা কাজ ছিল “২২শে এপ্রিল”।
প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা (Proti Brihoshpotibar Sondha 7ta)

“বুকের বাঁ পাশে” নাটকের জুটি ‘মেহজাবিন-নিশো’ -কে নিয়ে এবারের নাটক “প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা“। আরিয়ানের এই নাটকটি তৈরি মূলত একটি ভেঙ্গে যাওয়া ফ্যামিলিকে (ব্রোকেন ফ্যামিলি) নিয়ে। চোখে পড়ার মতো গল্প না থাকলেও এই নাটকের মূল বিষয়বস্তু হল নাটকের শেষে দেয়া শিক্ষনীয় মেসেজটি। বর্তমান সময়ে আমরা প্রায় দেখে থাকি, স্বামী স্ত্রীর টানাপোড়নের শেষ পরিণতি হয় ডিভোর্সে। কিন্ত শেষ হয়েও যেন হয়না শেষ! কারণ, ডিভোর্সের কারণে স্বামী স্ত্রী রক্ষা পেলেও সারাজীবনের জন্য একটা অন্যরকম ছকে বাঁধা পড়ে যায় তাঁদের সন্তান। অনিশ্চিত পথ আর অস্বাভাবিক জীবন কাঁটাতে হয় দোটানায় পড়ে যাওয়া সন্তানকে। এমনই বিষয়বস্তু উঠে এসেছে “প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা” নাটকের পর্দায়। নিশো-মেহজাবিনের অসাধারন কম্বিনেশনে আর মিজানুর রহমানের আরিয়ানের অনন্য কারুকার্যে এই নাটকটিও দর্শকদেরকে ভাবিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। ঈদের পরদিন বাংলাভিশনের পর্দায় রাত ৯টায় প্রচারিত হয় “প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা”। আর ইউটিউবে নাটকটি দেখা যাবে Global TV Drama চ্যানেলে।
শেষটা সুন্দর (SheshTa Sundor)

শুধু শেষটা নয়, পুরো নাটকটিই ছিল সুন্দর। আর শেষটাকে যদি সুন্দর বলতেই হয় তবে বলতে হবে, “শেষটা অনেক বেশিই সুন্দর”। আরিয়ানের “শেষটা সুন্দর” নাটক দেখার পর দর্শক হিসেবে আমার অভিমত অনেকটা এরকমই। নিশো-মেহজাবিনের জুটিতে আবারো একটি সুন্দর ভালোবাসার গল্প ফুটে উঠেছে এই নাটকটির ফ্রেমে। আগলে রাখার নামই যে ভালোবাসা, নাটকের গল্পে এমনটাই দেখতে পারবে দর্শকরা। নিশো-মেহজাবিনের অভিনয়ে সুন্দর রোমান্টিক মুহূর্তগুলো ছিল দেখার মতো, অনুভব করার মতো। অনেক নাটকের শেষ পরিণতি দর্শকরা মেনে নিতে পারেন না। কিন্ত এই নাটকের বিশেষত্ব যেন এখানেই। শেষটা এতো বেশিই সুন্দর যে, দর্শকদের মন ভরবেই। হয়ত একারণেই নাটকের নাম হয়েছে “শেষটা সুন্দর”। “কাবিন হিসেবে আমি তোকেই চাই, যদি কখনো আমাদের বিচ্ছেদের কথা আসে তাহলে, কাবিন হিসেবে যেন তোকেই পাই…” নাটকের শেষ দৃশ্যে মেহজাবিনের এই ডায়ালগটি এখন ফেসবুকে ভাইরাল প্রায়।
সবশেষে আবারো বলতেই হয়, শুধু শেষটাই নয়, পুরো নাটকটাই অনেক বেশি সুন্দর। ঈদের ৩য় দিনে চ্যানেল নাইনের পর্দায় রাত ৯টায় প্রচারিত হয় “শেষটা সুন্দর”। আর নাটকটি ইউটিউবে দেখা যাবে CD Choice চ্যানেলে।
দেখা হবে কি? (Dekha Hobe Ki?)

অবশেষে আরিয়ানের ঈদ আয়োজন শেষ হচ্ছে “দেখা হবে কি?” নাটকের মধ্য দিয়ে। তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় এই নির্মাতার এবারের ঈদ আয়োজনের শুরুটা যেমন হয়েছিল সাড়া জাগিয়ে। শেষটাও হচ্ছে আরেকটি সুন্দর রোমান্টিক নাটকের মধ্য দিয়ে। অপূর্ব এবং তানজিন তিশা অভিনীত “দেখা হবে কি?” নাটকের গল্পটিতে ছিল যেমন নতুনত্ব। আরিয়ানের ফ্রেমে উঠে আসা সুন্দর রোমান্টিক মুহূর্তগুলোও ছিল দারুন ভালোলাগার মতো। সবশেষে ঈদের ৫ম দিনে দুপুর ২টা ১০মিনিটে “দেখা হবে কি?” প্রচারের মধ্য দিয়ে শেষ হল মিজানুর রহমান আরিয়ানের এবারের ঈদ আয়োজন। নাটকটি ইউটিউবে দেখা যাবে Dhupchaya Entertainment চ্যানেলে।
কেমন ছিল আরিয়ানের ঈদ নাটক গুলো?

দর্শক, মিজানুর রহমান আরিয়ানের এবারের ঈদের কোন নাটকটি বেশি ভাল লেগেছে? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না…
আমি নাটক লিখেছি এবং সেটি পাঠাতে চাই।
০১৭০৫৭৫৫৪৯১