ব্রা-দার বাংলা নাটক রিভিউ (Bra-ther)

ব্রা-দার বাংলা নাটক

নেগেটিভ জিনিসের প্রতি আমাদের আকর্ষণ যেন আকাশ ছোঁয়া! আর সেটা যদি হয় আমাদের নিজেদেরই বানানো কোন নেগেটিভ কিছু। তাহলে তো সেই আকর্ষণ মহাকাশও ছুঁই ছুঁই করে।

ব্রা! নামটা শুনলেই যেন চোখ কপালে উঠে যায়। আমাদের ছেলেদের দিক থেকে বলছি আরকি! উঠতি বয়সের ছেলেদের মাঝে তো ‘ব্রা’ শব্দটা শুনলেই তড়িৎ গতিতে বিকৃত ঝড় উঠে যায়। হ্যা, আমার কথাগুলো শুনতে বিকৃত কিংবা বাজে মনে হলেও আসল সত্য কিন্ত এটাই। আর এটাকেই বলে ট্যাবু। অথচ স্বাভাবিকভাবে নিলে, ‘ব্রা’ মেয়েদের একটি অন্তর্বাসের নাম মাত্র। আন্ডারগার্মেন্টস প্রডাক্টও বলা হয়ে থাকে। আমরা ছেলেরা যেমন ‘স্লিভলেশ শার্ট’ পড়ি, সোজা বাংলায় যেটাকে ‘স্যান্ডো গেঞ্জি’ বলা হয়ে থাকে। মেয়েদের জন্যও সেই পোশাকের নাম ‘ব্রা’। একদম পানির মতো সহজ এবং স্বাভাবিক কথা। কিন্ত সেটাকে আমরা আমাদের সমাজে এমন Uncensored জিনিস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি যে এই নাম শুনলেই ছেলেদের মাঝে বিকৃত মানসিকতা তৈরি করে ফেলে। এর কারণটাও লেখার প্রথমেই বলেছি। আমাদের সমাজে কিছু স্বাভাবিক বিষয়বস্তুকেও নেগেটিভ বানিয়েছি এই আমরাই। ‘ব্রা’ সেরকম একটি উৎকৃষ্ট উদাহরন।

তরুণ নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ এই ‘ব্রা’ ইস্যুটার সামাজিক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছেন তাঁর নতুন নাটক ‘ব্রা-দার’ -এ।

একনজরে ব্রা-দার বাংলা নাটক (Bra-ther)

গত ২২ নভেম্বর আইফ্রিক্সে প্রকাশ পেয়েছে জনপ্রিয় তরুণ নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ’র নতুন ফিকশন ‘ব্রা-দার’। মেয়েদের অন্তর্বাস (ব্রা) নিয়ে আমাদের হীনমন্যতাকে তুলে ধরেই তৈরি হয়েছে নাটক ‘ব্রা-দার’। মেয়েদের অন্তর্বাস ব্যবসায়ী একজন মানুষের বিয়ের গল্প দেখা যাবে ২৫ মিনিটের এই ফিকশনটিতে। অন্তর্বাস ব্যবসায়ীর চরিত্রে দেখা যাবে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী আফরান নিশোকে। আর অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছে সামিয়া অথৈ, গোলাম রব্বানী মিন্টু, সিয়াম নাসিরসহ আরও অনেকে। নাটকটি শেষে তুলে ধরা হয়েছে ব্রা -কে নিয়ে আমাদের হীন মন মানসিকতা পরিবর্তনের মেসেজ।

নাটকঃ ব্রা-দার (Bra-ther)

গল্প, কাহিনীচিত্র, সংলাপ ও পরিচালনাঃ মাবরুর রশীদ বান্নাহ

অভিনয়ঃ আফরান নিশো, সামিয়া অথৈ, গোলাম রব্বানী মিন্টু, শাহেদ আলী, সিয়াম নাসির, তানজিম হাসান অনিকসহ আরও অনেকে…

প্রধান সহকারী পরিচালকঃ এম এ তৌফিক

সহকারী পরিচালকঃ এসকে অমিত এবং মোঃ রাকিব হক

সিনেমাটোগ্রাফিঃ নাজমুল হাসান

সম্পাদনাঃ রকিব রানা

আমার চোখে ব্রা-দার (রিভিউ)

ব্রা-দার বাংলা নাটক

সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু ভিত্তিক নাটক/ফিকশন/শর্ট ফিল্ম বানিয়ে থাকেন তরুণ প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা বান্নাহ। বরাবরের মতো আবারও তেমনই একটি নাটক তৈরি হল আমার প্রিয় পরিচালক মাবরুর রশীদ বান্নাহ’র ফ্রেমে। মেয়েদের ইনার গার্মেন্টস/অন্তর্বাস/ব্রা বিক্রেতা নিশোর চরিত্রের মাধ্যমে আরও একটিবার আমাদের চোখ খুলে দিল ‘ব্রা-দার’ নাটকটি। আর কিছু বলার আগে নাটকটির নাম নিয়ে বলতেই হয়। ‘ব্রা-দার’ এই নামেই নাটকটির থিম উঠে এসেছে পুরোপুরি। নাম করণের সার্থকতা বলতে গেলে একদম যথাযথ। ‘ব্রা-দার’ নামটিতে যথেস্ট টুইস্টও ছিল। নাটকটির ট্রেইলার প্রকাশের সময় নামটি দেখে কনফিউজড ছিলাম। কারণ ‘ব্রাদার’ নামের নাটক ইতিমধ্যে বানিয়েছেন এই পরিচালক। কিন্ত ‘ব্রা-দার’ শব্দটিতে একটি হাইফেনই পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে।

এবার আসা যাক নাটকটি সম্পর্কে। বরাবরের মতোই বলতে হয়, ‘অসাধারন’। প্রতিবারের মতো আবারও উঠে আসলো একটি সামাজিক বার্তা। ‘ব্রা’ নিয়ে আমাদের হীনমন্যতা সম্পর্কে ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। আমাদের প্রত্যেকের মতো সেই হীনমন্যতা উঠে এসেছে নাটকের গল্পেও। এমনকি, গল্পের প্রধান চরিত্র অন্তর্বাস বিক্রেতা নিশোও নিজের পরিচয় দিতে কিছুটা ইতস্তবোধ করেছে। এমনটাই ফুটে উঠেছে তাঁর অভিনয়ে। নিশোর বিয়েতেও বাঁধা হয়ে আসে তাঁর পরিচয়। আর দশজন সাধারন ব্যবসায়ীর মতো ব্যবসায়ী হলেও তাঁর পরিচয় তিনি মেয়েদের অন্তর্বাসের ব্যবসা করেন। নাটকটিতে দেখানো হয়, এই স্বাভাবিক-সাধারন পেশাটাকেও আমরা কতটা নেতিবাচকভাবে দেখে থাকি। কতটা নিচু পেশা হিসেবে গন্য করি। তবে সেইসব ধারণার দাঁত ভাঙ্গা জবাবও মিলেছে শেষ দৃশ্য -তে। সবমিলিয়ে ভালোই ছিল।

প্রিয় পরিচালক বান্নাহ’র নাটক আমার চোখে সবসময়ই অসাধারন। তবুও রিভিউ লেখার খাতিরে এবার আমার ভালো না লাগার বিষয়টা লিখতেই হচ্ছে। একজন সাধারন দর্শক হিসেবেই লেখা। একাধিকবার বলেছি, বান্নাহ’র প্রায় সব নাটক সামাজিক ইস্যু বা মেসেজ ভিত্তিক। এর আগেও একই ধাঁচের বেশ কয়েকটি নাটক দেখা গেছে। যেমনঃ হোম টিউটর, ছেলেটা বেয়াদব, আউটসোর্সিং ও ভালোবাসাসহ বেশ কিছু নাটক। এবারের নাটকটিও একদম প্রায় একই ধাঁচের হয়ে গেছে। অর্থাৎ গল্পের গঠনটি প্রায় একই রকম লেগেছে। যেটা এই ধরনের প্রতিটি নাটকে একটু আলাদা আলাদা হলে হয়ত ভালো লাগবে। অন্তত যারা আমার মতো মাবরুর রশীদ বান্নাহ রেগুলার ভিউয়ার। তাঁদের ক্ষেত্রে আকর্ষণটা কমবেনা। আর নাটকটির শুরুতে হালকা কমেডি দারুণ লেগেছে। কিন্ত যখন দেখলাম নাটকটি মাত্র ২৫ মিনিটের। তখন কেন যেন একটা অপূর্ণ ফিলিংস তৈরি হল। নাটকটির ব্যপ্তিকাল একটু বড় হলে দর্শক আরও গভীরে যেতে পারত।

সবমিলিয়ে অসাধারন ছিল ‘ব্রা-দার’ নাটকটি। কারণ, ‘ব্রা’ নিয়ে আমাদের যে নেতিবাচক মন মানসিকতার পরিচয় দেই আমরা সমাজে। সেটা বদলানোর মোটিভেশন ছিল নাটকের শেষে।

অনলাইনে যেভাবে দেখবেন ‘ব্রা-দার’ নাটক

ব্রা-দার‘ নাটকটির রিলিজ হয়েছে ‘আইফ্লিক্স‘ নামের এন্টারটেইনমেন্ট পোর্টালে। তাই নাটকটি দেখতে ভিজিট করুন iflix.com অথবা ক্লিক করুন এখানে। এছাড়া মোবাইলেও দেখতে পারেন ‘ব্রা-দার’। সেক্ষেত্রে আপনাকে গুগল প্লে স্টোর থেকে ইন্সটল করে নিতে হবে আইফ্লিক্স অ্যাপটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *