ছেলেটা বেয়াদব, আমরা লজ্জিত!

ছেলেটা বেয়াদব

বেয়াদব তো বেয়াদবই। যে অভদ্র, সেই বেয়াদব। কিন্ত মজার বিষয় হলো আমাদের সমাজে বেয়াদব দুই ধরনের। আরও মজার বিষয় হলো, আমরা সচরাচর বেয়াদব হিসেবে যাদেরকে চিনি, একটু গভীরভাবে ভাবলে তারা আসলে কেউই বেয়াদব না। আর এই ধারনাটির চিত্র ফুটে তুলেছেন নাট্যনির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ, তাঁর “ছেলেটা বেয়াদব” নাটকে।

একনজরে – ছেলেটা বেয়াদব নাটক

আমাদের সমাজের চোখে তথাকথিত বেয়াদব ছেলেদের চিত্র নিয়েই “ছেলেটা বেয়াদব” নাটক। তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ’র গল্প ও পরিচালনায় তৈরি এই নাটকে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো ও তানজিন তিশা। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ তিনটি চরিত্রে অভিনয়ে ছিলেন সিয়াম নাসির, সাগর হুদা এবং সাগর খান। Club 11 Entertainment -এর ইউটিউব চ্যানেলে ১৬ -ই অক্টোবর প্রকাশিত হয় নাটকটি। পূজা উপলক্ষে প্রচারিত নাটকটি ২৪ ঘন্টার মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

নাটকঃ ছেলেটা বেয়াদব
গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং পরিচালনাঃ মাবরুর রশীদ বান্নাহ
অভিনয়ঃ আফরান নিশো, তানজিন তিশা, সিয়াম নাসির, সাগর হুদা, সাগর খানসহ আরও অনেকে
প্রডিউসরঃ আকবর মুন্না
এক্সিকিউটিভ প্রডিউসরঃ মাসুদ উল হাসান
সিনেমাটোগ্রাফিঃ আশিক আমান
সম্পাদনাঃ সাদ্দাম বিন ইয়াসিন
চিফ এডঃ এম. এ তৌফিক
এডসঃ এসকে অমিত, রাকিব
এডস (অরিয়েন্টেশন)ঃ গার্সেন, বাপ্পি, রাব্বি
গানঃ বেয়াদব
লিরিক্স ও ভোকালঃ তানজিম হাসান অনিক
মিউজিক মিক্সঃ নাফিজ প্রান
রেকর্ড লেবেলঃ অটোগ্রাফি সাউন্ডস
পোস্টারঃ এমএইচ তন্ময়
প্রডাকশন হাউসঃ আন্ডারগ্রাউন্ড ক্রিয়েটিভ ফ্যাক্টরি

ছেলেটা বেয়াদব নাটক রিভিউ

ছেলেটা বেয়াদব নাটক

তন্ময় নামের ছেলেটি সমাজের তথাকথিত বেয়াদব। এই চরিত্রে অভিনয় করেছে আফরান নিশো। আর তাঁর প্রেমিকা হিসেবে থাকে তানজিন তিশা। যদিও নাটকটি প্রেম-ভালোবাসা ভিত্তিক না। কিন্তু প্রেম-ভালবাসা-রোমান্টিকতার কমতি ছিল না। আর বান্নাহ পরিচালিত অন্যান্য নাটকের মতো এই নাটকেও নিশোর সহচর অর্থাৎ এলাকার ছোট ভাই চরিত্রে অভিনয় করে সিয়াম নাসির। অন্যদিকে সাগর হুদা হলেন রগচটা বেয়াদব নিশোর বাবা এবং সাগর খান তিশার বাবা।

এলাকার বেয়াদব চরিত্রে ফুটিয়ে তোলার জন্য আসলেই পারফেক্ট অভিনয় করেছে নিশো। হয়ত পরিচালক হিসেবে বান্নাহ না থাকলেও অন্য পরিচালকও নিশোকেই বেছে নিতেন চরিত্রটি ফুটানোর জন্য। কারন, ছোট পর্দার অভিনয় শিল্পীদের মাঝে নিশোই এ ধরনের চরিত্রে সবথেকে সাবলীল অভিনয় করে থাকে। আর মাবরুর রশীদ বান্নাহ’র সম্প্রতি বেশ কিছু নাটকে তানজিন তিশার অসাধারণ অভিনয় দেখা গিয়েছে। সেগুলোর মতো এই নাটকেও তানজিন তিশার অভিনয় ভাল ছিল।

এলাকার যেকোন খারাপ কাজের জম ‘নিশো’। অপরাধের ক্ষেত্রে এলাকার ষাটোর্ধ মুরুব্বী থেকে শুরু করে প্রেমিকার বাবাকেও শাসিয়ে থাকে সে। ঘুষ খাওয়ার অপরাধের কারণে ছেড়ে কথা বলেনা নিজের বাবাকেও। আর আমাদের সমাজের চোখে এধরনের রগচটা ছেলেগুলোই মূলত বেয়াদব। একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবলেই আমরা বুঝব, আপনার আমার কোন অপরাধ-অসঙ্গতি নিয়ে কেউ উচিৎ কথা বললেই আমরা তাকে বেয়াদব হিসেবে চিনি। আর বর্তমান সময়ে, উচিৎ কথা বলার অভ্যাসটা তরুণ প্রজন্মের মাঝেই সবথেকে বেশি দেখা যায়। সমস্যা বাঁধে তখনই, যখন কম বয়সী কোন ছেলে তাঁর বয়সে বড় কাউকে উচিৎ কথা বলে। চলতি সময়ে আমাদের চারপাশে এ ধরনের ছেলেগুলোই সবচেয়ে বেশি বেয়াদব হিসেবে পরিচিত। আসলেই কি তা হওয়া উচিৎ? আমাদের পুরোনো মন-মানসিকতা অনুযায়ী বিষয়টা আমরা মেনে নিতে না পারলেও প্রকৃতপক্ষে ঐ বেয়াদব ছেলে গুলোই ঠিক। ঠিক -কে ঠিক বলতে না পারা আর উচিৎ কথা বলতে বয়সের মাপকাঠি বিচার করাই আমাদের মন-মানসিকতাকে অন্ধকারে রেখেছে। আর এ কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভুগী হচ্ছে আমাদের সমাজ। আর এই অসঙ্গতি উঠে এসেছে “ছেলেটা বেয়াদব” নাটকে। হাস্যরসাত্মক কিছু ডায়ালগ, একটুখানি প্রেম-ভালবাসা আর বাকি পুরোটাই আমাদের সমাজের তথাকথিত বেয়াদব ছেলের ঘটনা।

সবমিলিয়ে অসাধারণ নাটক “বেয়াদব ছেলে” দেখতে হলে আপনাকে ঢুঁ মারতে হবে Club 11 Entertainment -এর ইউটিউব চ্যানেলে। ছেলেটি বেয়াদব! অন্যদিকে আমরা বেয়াদব নই বলে লজ্জিত। নাটকটি দেখা শেষে এমনটি মনে হলে মোটেও অবাক হবেন না কিন্ত! প্রতি ঘরে জন্ম হোক এরকম বেয়াদব ছেলে বা মেয়ের!

ভালোলাগার বান্নাহ এবং আমার এলোমেলো কিছু কথামালা

মাবরুর রশিদ বান্নাহ

নাটক পাগল একজন দর্শক হিসেবে আমার প্রিয় নাট্যনির্মাতাদের একজন হলেন মাবরুর রশিদ বান্নাহ। একটি বিশেষ কারনেই শুধু তাঁর নাটক ভালো লাগে। নাটককে শুধু বিনোদন দেয়ার মাধ্যম হিসেবে না নিয়ে সমসাময়িক সোশ্যাল ইস্যু ভিত্তিক বার্তা দেয়ারও মাধ্যম বানিয়েছেন এই তরুণ নাট্যনির্মাতা। দু তিন বছর আগেও বাংলা সিনেমার মতো অধিকাংশ নাটকের গল্পও দেখার সাথে সাথে অনুমান করা যেত। কিন্ত সময় বদলেছে। বদলে গেছে সেই ধারণাও। চিরচেনা গল্পের প্লটে তৈরি নাটকগুলোতেই এখন খুঁজে পাওয়া যায় নতুনত্ব। শেষ দৃশ্য পর্যন্ত দর্শকের চোখ আটকে থাকে নাটকের দৃশ্যপটে। রুপকথার গল্পের চেয়ে এখন প্রাধান্য পায় আমাদের জীবনেরই গল্পগুলো। এই আমূল পরিবর্তনের অন্যতম একজন যোদ্ধা মাবরুর রশিদ বান্নাহ। তরুণদের জীবনগল্পই যার মূলমন্ত্র। তাই একজন তরুণ হিসেবে তাঁর কাজের প্রতি আমার ভালোলাগা একটু বেশিই। ছেলেটা বেয়াদব নাটকসহ তাঁর প্রতিটা নাটক ছিল তরুণদের জীবন-ঘটনাকে কেন্দ্র করে। প্রতিটা কাজে ছিল বিভিন্ন সোশ্যাল ইস্যু ভিত্তিক বার্তা। আর মাবরুর রশিদ বান্নাহ’র নাটকের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে অনেক তরুণ মুখ। সবমিলিয়ে নাট্যজগতে আমার ভালোলাগার একজন ব্যক্তি মাবরুর রশিদ বান্নাহ।

2 Comments

  1. সবমিলিয়ে আমার কাছে হুমায়ুন স্যারের পরে যদি কোনো নাট্যনির্মাতা বা পরিচালককে বেছে নিতে হয় তাহলে আমি মাবরুর রশিদ বান্নাহ ভাইকে বেছে নিব। কারণ হুমায়ুন স্যারের খুব কম নাটকই আছো যে আমি দেখিনি আর সেই নাটকগুলোতে ছিল সমসাময়িক বাস্তবতার দৃষ্টান্ত। আমি এটা বিশ্বাস করি যে বান্নাহ ভাই ঠিক হুমায়ুন আহমেদ স্যারের পথকেই অনুসরণ করেছেন। আর এর জন্য তিনি বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে সমাজের বিভিন্ন বাস্তবতার চিত্র গুলো উনি উনার নাটকে তুলে ধরেছেন। আর বান্নাহ ভাইয়ের নাটক গুলো আমার এতো ভালো লাগে যে, আমি উনার একটা নাটকও মিস করি না। আগামীতেও চাই বান্নাহ ভাই যেন এই সেক্টরে আরো এগিয়েছে যায় এবং এই ধরনের নাটকগুলো আরো বেশি বেশি নির্মাণ করে। আই স্যালুট হিম….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *