জীবনের দিন রাত – পাঠাও নিবেদিত পূর্ণদৈর্ঘ্য বিজ্ঞাপন এবং নাটক

জীবনের দিন রাত

নাটকপ্রিয় মানুষ হিসেবে নতুন নতুন নাটকের প্রতি আমার আগ্রহ বেশ। অন্যদিকে একাউন্টিং ব্যাকগ্রাউন্ডে পড়াশুনা হলেও মার্কেটিং -এর প্রতি আগ্রহও কম নয় আমার! তাই ক্রিয়েটিভ বিজ্ঞাপনগুলোর খোঁজ রাখতেও ভাল লাগে।

ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করছিলাম। এমন সময় চোখ আটকে গিয়েছিল একটি ক্যাপশনে! পরিচিত এক ভাই “Jiboner Din Rat” নামের একটি নাটক শেয়ার দিয়ে লিখেছেন “বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য বিজ্ঞাপন। 😀 পুরো ৪৮ মিনিট।” বেশ মজা পেয়েছিলাম ক্যাপশনটিতে। নাটকটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানি “পাঠাও” নিবেদিত। ক্যাপশন দেখেই আর বুঝার বাকি নাই যে, নাটকটি পুরোটাই পাঠাও -এর বিজ্ঞাপন ভরপুর একটি নাটক হবে। যেমনটি আগেই বলেছিলাম, নাটক দেখতে তো ভাল লাগেই, সাথে বিজ্ঞাপন দেখতেও খারাপ লাগেনা আমার। ব্যাটে বলে মিলে যাওয়ায় নাটকটি দেখেছিলাম। ভালো লেগেছিল নাটকের গল্পটি। সাথে ভালো লেগেছে পাঠাও -এর মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি!

নাটক দেখা শেষে তাই লিখছি পাঠাও নিবেদিত ‘জীবনের দিন রাত’ নাটকের ভাল-মন্দ লাগা দিকগুলো নিয়ে।

এক নজরে পাঠাও নিবেদিত নাটক ‘জীবনের দিন রাত’

রিফাত আদনানের রচনা ও নাজমুল রনির পরিচালনায় পাঠাও নিবেদিত ‘জীবনের দিন রাত‘ নাটকটিতে অভিনয় করেছে অপূর্ব এবং শবনম ফারিয়া। গত ১৯ অক্টোবর তারিখে নাটকটি প্রচারিত হয় ‘নাগরিক টিভি’ -এর পর্দায়। এছাড়া ‘ফ্যাক্টর থ্রি সলিউশনস‘ ইউটিউব চ্যানেলেও দেখা যাবে নাটকটি।

নাটকটিতে জীবন চরিত্রে অভিনয় করে অপূর্ব এবং প্রেমিকা হিসেবে মিতু চরিত্রে অভিনয় করেছে শবনম ফারিয়া। জীবন বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান। বাস্তবতা নিয়ে নেই তাঁর বিন্দুমাত্র কোন ধারনা। প্রচন্ড অলস প্রকৃতির বেকার এবং দায়িত্বহীন ছেলে হলেও জীবনের নেই কোন বাজে অভ্যাস। জীবনের দিন কাটে তাঁর গার্লফ্রেন্ড মিতু, বাইক আর ছোট-বড় ভাইদের সাথে আড্ডা দিয়ে। কিন্ত দায়িত্বহীনতা আর খামখেয়ালীর কারণে মিতুর সাথে ঝগড়া লেগেই থাকে জীবনের। একদিন ভুলবুঝাবুঝির কারণে জীবনের সাথে ব্রেকাপ করে ফেলে মিতু। এরমাঝেই এক্সিডেন্ট করে জীবন। জীবনের এক্সিডেন্টের খবর সইতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় জীবনের বাবা। এতে জীবন মুখোমুখি হয় কঠিন বাস্তবতার। সংসার চালাতে এলাকার বড়-ভাইয়ের পরামর্শে সে বেঁচে নেয় শখের বাইক চালানোকেই। রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাও -এ জীবন যোগ দেয় একজন রাইডার হিসেবে। এভাবেই চলতে থাকে “জীবনের দিন রাত” নাটকের গল্প। পুরো গল্প জানতে এখনই দেখে নিন পাঠাও নিবেদিত ‘জীবনের দিন রাত’ নাটকটি।

নাটকঃ জীবনের দিন রাত | Jiboner Din rat
অভিনয়ঃ জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, শবনম ফারিয়া, মনিরুল ইসলাম মনির, এসএম আশরাফুল আলম এবং তালহা খান।
রচনাঃ রিফাত আদনান পাপন
পরিচালনাঃ নাজমুল রনি
প্রযোজনাঃ ফ্যাক্টর থ্রি সলিউশনস

জীবনের দিন রাত নাটকের ভাল মন্দ

'জীবনের দিন রাত' নাটক

পাঠাও নিবেদিত এই নাটকটিকে পজিটিভ এবং নেগেটিভ দু’ভাবেই দেখার সুযোগ আছে দর্শকের। প্রথমত পজিটিভলি যদি বলি, ব্যক্তিগতভাবে নাটকটি আমার অনেক ভাল লেগেছে। দর্শকরা এখন নাটকীয় রুপকথার গল্পের চেয়ে এখন বাস্তব এবং সাধারন গল্পই অসাধারনভাবে দেখতে বেশি পছন্দ করে। ‘জীবনের দিন রাত’ নাটকে আমি সাধারন গল্পেরই অসাধারন প্রতিফলন দেখেছি আমি। এক কথায়, নাটকের গল্প ভালই ছিল। আবার নাটকটি যেহেতু প্রকৃতপক্ষে পুরোটাই বিজ্ঞাপন নির্ভর ছিল। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলেও ‘পাঠাও’ সফল। যখন একটি নাটক পুরোটাই বিজ্ঞাপন হিসেবে চালানো হয় তখন দর্শককে সেটা দেখানো সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। বিজ্ঞাপন এবং গল্পের সামঞ্জস্যতার কারণে দর্শকরা হয়ত নাটকটিকে বাঁকা চোখে না দেখে বরং উপভোগই করবে বলে আমার মনে হয়।

এবার আসি নেতিবাচক দৃষ্টিকোণে। সব দর্শকই যে পজিটিভলি নিবে সেটা ভাবারও কোন সুযোগ নেই। নাটকটি যেহেতু পুরোটাই পাঠাও -এর বিজ্ঞাপন নির্ভর ছিল। তাই বিজ্ঞাপনের মাত্রাটা নিঃসন্দেহে একটু বেশিই হয়ে গেছে। নাটকের গল্পটিই যেহেতু পাঠাও নির্ভর ছিল। তাই নাটকের মাঝে মাঝে আলাদা বিজ্ঞাপন দেওয়াটা বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে।

তবে সব মিলিয়ে বলতে হয় নাটকটি সুন্দর ছিল। আর মজা করে বললেও ভুল হবেনা যে, নাটকটি আসলেই বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য বিজ্ঞাপন ছিল। পাঠাও -এর জন্য শুভ কামনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *