
ও যেন আমার হয়! কাউকে সত্যিকারের ভালোবেসে থাকলে এমন চাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর ভালবাসার মানুষকে চাওয়ার প্রার্থনার গল্প নিয়ে প্রান ফ্রুটোর সৌজন্যে এবার নাটক বানালেন জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ। গত ২০ ডিসেম্বর ইউটিউবে প্রকাশ পেয়েছে নিশো এবং সাবিলা নূর অভিনীত নাটক ‘ও যেন আমার হয়’।
কিন্ত নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় পরিচালক বান্নাহ’র নাটক মানে শুধুই গতানুগতিক ভালবাসার গল্প নয়! তার ব্যতিক্রম ঘটেনি ‘ও যেন আমার হয়’ নাটকেও। ভালবাসার গল্প হলেও রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা আর নতুনত্ব। রুপায়নের আজকের পোস্টে থাকছে ‘ও যেন আমার হয়’ নাটক নিয়ে ছোট্ট রিভিউ।
- আরও পড়তে পারেনঃ ছেলেটা বেয়াদব / জীবনের দিন রাত / ব্রা-দার নাটক রিভিউ
এক নজরে ‘ও যেন আমার হয়’ নাটক
‘ও যেন আমার হয়’ নাটকের গল্পে ইমন চরিত্রে অভিনয় করেছে বর্তমান সময়ে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী আফরান নিশো। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় একটা ছোট শিশুকে বাঁচাতে গিয়েই সে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিয়েছে। অন্যদিকে সাবিলা নূর অসাধারন অভিনয় করেছে কনা নামের মেয়ের চরিত্রে। ইমনের একই পাড়ায় থাকে কনা। আর রাহাত চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছে মুশফিক ফারহান। রাহাত হল কনার হবু বর। ঘটনাক্রমে ইমনের সাথে কনার খুব ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সম্পর্কটা শুধু বন্ধুত্ব থাকলেও রাহাত সেটাকে ভাল চোখে না নেওয়ায় ইমনকে বিভিন্ন হুমকি দেয় এবং এক পর্যায়ে ইমনকে মারধোর করে। ইমন আগে থেকেই কনাকে পছন্দ করলেও সেটা কনাকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে দেয়নি। যদিও তাঁর হবু বরের এমন আচরনের এক পর্যায়ে কনা বুঝতে পারে সে ইমনকে পছন্দ করে ফেলেছে। অন্যদিকে, ইমনের বাজে পার্সোনালিটির পরিচয় পেয়ে সে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য জানিয়ে দেয়। এভাবেই চলতে থাকে গল্পটি। গল্পের শেষ দৃশ্যই ছিল নাটকটির মূল আকর্ষণ। অসাধারন সেই শেষ দৃশ্য আর মূল্যবান একটি মেসেজ পেতে আপনাকে দেখতে হবে ‘ও যেন আমার হয়’ নাটকটি। ১ ঘন্টার এই অসাধারন নাটকটি দেখা যাবে ইউটিউবে সিনেমাওয়ালা চ্যানেল -এ।
নাটকঃ ও যেন আমার হয় (O Jeno Amar Hoy)
পরিচালকঃ মাবরুর রশীদ বান্নাহ
অভিনয়ঃ আফরান নিশো, সাবিলা নূর, মুশফিক ফারহান এবং আরও অনেকে।
প্রধান সহকারী পরিচালকঃ এম এ তৌফিক
সহকারী পরিচালকঃ এসকে অমিত এবং মোঃ রাকিব হক
অন্যান্য চরিত্রঃ রিয়াল, হৃদয়, হিরক
গানঃ যদি চিনতে পারো
গায়কঃ হৃদয় এফ টি এবং মৌসুম
আমার চোখে ‘O Jeno Amar Hoy’ (নাটক রিভিউ)
যেকোন নাটক, সিনেমার গল্প কিংবা কোন গানের কথার সাথে যখন আপনি আপনার ছায়া খুঁজে পাবেন। সেটা কারণেই হোক, কিংবা অকারণে! সেটা ভাল লাগবেই।
মাবরুর রশীদ বান্নাহ তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের মনে জায়গা দখল করেছেন কারণ তাঁর তৈরি কাজগুলো তরুণদের গল্প বলে। তেমনই, এই নাটকটিতে আমি আমার ছায়া খুঁজে পেয়েছি। যেমনটা শুরুতে বলছিলাম, নাটকটি রোমান্টিক হলেও আছে ভিন্নতা। ভালবাসায় অনেক রকম বাঁধাই এসে থাকে। কমন বাঁধাগুলোই দেখানো হয় গতানুগতিক ভালবাসার গল্প ভিত্তিক নাটকগুলোতে। এই নাটকে দেখানো হয়েছে অন্যরকম আরেকটি বাঁধা। আর তা হল, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা! নাটকের গল্পে আফরান নিশো শারীরিকভাবে পঙ্গু হলেও সে মানুষ হিসেবে অনেক স্মার্ট এবং মনের দিক থেকেও সুন্দর। আর সেটাই কেড়ে নিয়েছিল সাবিলা নূরের মন। সাবিলা সেই ভালবাসায় কখনও নিশোর পঙ্গুত্বকে মাথায় না আনলেও অন্যরা সেটাকে বাজেভাবে তুলে ধরেছে। আর সেটাই বাস্তব এই সমাজে। যদিও নাটকের গল্প অনুযায়ী, আমার মনে হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাটা ভালবাসার মূল বাঁধা হিসেবে দেখানো হয়নি। কিন্ত, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দুর্বলতা হিসেবে নিয়ে আমাদের আশেপাশের মানুষরা যেভাবে ছোট করে। সেটাই তুলে ধরেছেন পরিচালক।
গায়ের জোরের ক্ষমতা যে আসল ক্ষমতা নয়, আর স্মার্টনেসও যে মানুষের পার্সোনালিটিতে থাকে। শেষ দৃশ্যে সেটাই অসম্ভব সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। আর যেকারণে পুরো নাটকের সৌন্দর্য আর পরিপূর্ণতা শেষ দৃশ্যেই পেয়েছি একজন দর্শক হিসেবে। আর হ্যাঁ, যেমনটা বলছিলাম, আমি আমার ছায়া খুঁজে পেয়েছি গল্পটিতে। কারণ, আমিও শারীরিকভাবে পঙ্গু একজন মানুষ। অথচ সেই প্রতিবন্ধকতাকে নিজের কাছে বড় মনে না হলেও অন্যরা হয়ত কারণে অকারণে অনেক সময়ই তা দেখিয়ে দেয়! একারণেই মূলত নাটকটি অসম্ভব ভাল লেগেছে। গল্পের মাধ্যমে সুন্দর মেসেজ দিয়েছে সবার জন্য। সব মিলিয়ে ভাল ছিল নাটকটি।