বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সাবজেক্ট নির্বাচনের ৫ টিপস

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সাবজেক্ট নির্বাচনের ৫ টিপস

মজার একটি বিষয় দিয়েই শুরু করা যাক। বাংলাদেশে অতি পরিচিত একটি যুদ্ধই হল “বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ“! কিছুটা মজার হলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কথাটি অনেকটাই বাস্তবসম্মত। এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে কিছুটা সীমিত সুযোগের ফলে ভর্তি পরীক্ষাটা অনেকটাই যুদ্ধের মতোই হয়ে উঠেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য সুযোগ করে নিতে ভর্তি পরীক্ষায় নিজের সেরাটাই দিতে হয়। যাই হোক, আজকের লেখার বিষয় ভর্তিযুদ্ধ না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুযোগ পাওয়ার গুরুত্বটা বুঝাতেই ভর্তি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরা। আজ আমাদের লেখার বিষয় মূলত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সাবজেক্ট নির্বাচনের ব্যাপারটি নিয়ে।

আমাদের দেশের শিক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি এবং অন্যান্য কিছু বাস্তবতার কারণে এই সাবজেক্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও রয়েছে ঝামেলা! আমাদের প্রত্যেকের পছন্দ ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে পছন্দের সাবজেক্ট নির্বাচনের সময় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। পারিপার্শ্বিক চাপ, ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের সুযোগ এবং আরও কিছু বিষয়ের কারণে আমাদের মাঝে খুব কম শিক্ষার্থীরই নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ হয়। তাই সাবজেক্ট নির্বাচনেও আমরা গতানুগতিক ধারা অনুসরণ করি এবং নিজের পছন্দকে উৎসর্গ করে দেই সেই স্রোতে। তবুও যারা নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে নিজের পছন্দের সাবজেক্টে পড়তে চান, তাদের জন্য রইল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সাবজেক্ট নির্বাচনের ৫ টিপস

নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিন সবার আগে

খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশ ও সমাজের প্রেক্ষাপটে পারিবারিক ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক চাপে খুব কম শিক্ষার্থীই নিজের পছন্দ অনুযায়ী পড়ার সুযোগ পায়। বাবা-মা এবং অন্যান্য প্রিয়জনদের ভাললাগাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের ইচ্ছেকে উৎসর্গ করা অতি পরিচিত ঘটনা। আপনি হয়ত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ভালবাসেন। অন্যদিকে আপনার পরিবার চায় আপনি ডাক্তার হবেন। এমন পরিস্থিতে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই পরিবারের পছন্দকেই বেছে নেই। কিন্ত এতে সমস্যা হয় পরবর্তীতে। আপনি হয়ত ঠিকই ডাক্তার হওয়ার জন্য পড়াশুনা শুরু করলেন। কিন্ত আপনার ভালবাসা-ভাললাগা সব থাকবে ঐ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরেই। তাই হয়ত নিজের সেরাটা দিতে পারবেননা ডাক্তার হবার পড়াশুনায়।

তাই এরকম পরিস্থিতে সর্বোত্তম উপায়টি হল, পরিবারের অবাধ্য না হয়ে বরং আপনার পছন্দের সাবজেক্টের প্রতি আপনার ভাললাগার কথা জানান এবং আপনার প্রিয়জনদেরকে বুঝানোর চেস্টা করুন। নিশ্চই আপনার পরিবার আপনাকে বুঝবে। কারণ, তাঁরা আপনাকে ভালবাসে এবং আপনার ভালটুকু চায়। তাই নিজের পছন্দকে বিলিয়ে না দিয়ে পরিবারকে বুঝানোর মাধ্যমে নিজের ভাললাগার বিষয়কেই প্রাধান্য দিন। এতে পড়াশুনার প্রতি আপনার অনীহা কখনই আসবেনা! বরং, একাডেমিক লাইফে আপনি নিজের সেরাটাই দিতে পারবেন।

ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবুন

বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনাটা পুরোটাই ক্যারিয়ারকে ঘিরেই। ভবিষ্যতে আপনি ক্যারিয়ারকে কিভাবে গড়বেন এর প্রায় পুরোটাই নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার উপর। তাই সঠিক সাবজেক্ট বেছে নেওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি চ্যালেঞ্জ। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আজকাল দেশের সংকুচিত চাকুরির বাজারের কথা ভেবেই বেশ কিছু চলমান চাহিদাপূর্ণ সাবজেক্টের দিকেই ঝুঁকে পড়ছেন। তবে ক্যারিয়ারের দিক থেকে সাবজেক্ট চয়েসে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। আমরা শুধু বর্তমান পরিস্থিতিই বেশি আমলে নেই এবং সে অনুযায়ী ভেবে থাকি। কিন্ত আমাদের ভাবনা হতে হবে আরও সুদূরপ্রসারী। শুধু ক্যারিয়ার নিয়েই ভাবলে চলবেনা। ক্যারিয়ারের সাথেও সামঞ্জস্যতা রাখতে হবে নিজের ভাললাগা-মন্দ লাগার।

আজকাল দেশে সরকারী চাকুরীর চাহিদা তুঙ্গে। অনেকেরই সরকারী চাকুরীর প্রতি আগ্রহ না থাকা স্বত্বেও বাস্তবতার কারণে সেই সরকারী চাকুরীর পিছনেই ছুটে থাকে। কিন্ত মাথায় রাখতে হবে যে, ক্যারিয়ার মানে আপনার লাইফের প্রায় অর্ধেক সময় সেই কর্ম করে যেতে হবে আপনাকে। আপনার ভাললাগার বিপরীতে গিয়ে লোভনীয় ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটার মতো সাবজেক্ট কখনও চয়েস করবেন না। সুদূরপ্রসারী ক্যারিয়ার ভাবনা, পছন্দের ক্যারিয়ার সেক্টর এবং ভাললাগা-মন্দ লাগার সামঞ্জস্যতাসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় বিবেচনা করে তবেই নির্বাচন করবেন পছন্দের সাবজেক্ট।

সাবজেক্ট নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়কেও গুরুত্ব দিন

সাবজেক্ট বাছাই করে নিতে বিবেচনায় রাখতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়কেও। কারণ আপনার পছন্দের সাবজেক্টের মান বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে অনেক সময় তারতম্য হয়ে থাকে। একেক সাবজেক্ট একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটও একটি ভাবনার বিষয়। আপনি পছন্দের সাবজেক্ট পেলেন হয়ত কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্ত দেখা গেল যে, ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার পছন্দের সাবজেক্টে সেশন জটের মাত্রা বেশি। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটা একটু গভীর ভাবনা চিন্তার পরই নিতে হবে। কারণ, পছন্দের সাবজেক্টের প্রতি ভালবাসা থাকলেও সেশন জট পরবর্তীতে আপনাকে ফেলে দিবে হতাশার সাগরে। যা ক্যারিয়ারে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলবে। তাই, সাবজেক্ট পছন্দের সময় অবশ্যই মাথায় রাখবেন আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন সেটি আপনার পছন্দের সাবজেক্টের জন্য কতটুকু উপযুক্ত।

আর্থিক সামর্থ্যকেও বিবেচনায় রাখুন

মনে রাখবেন, আর্থিক সামর্থ্যের বাহিরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সফলতা পেতে বেশ বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। আর, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষাও বেশ ব্যয়বহুল। বিশেষ করে, আমাদের দেশে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনার আর্থিক সামর্থ্য -এর অনেক বাইরে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ কিছুটা কম হলেও অনেক গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্যও সেটা কষ্টসাধ্য। অর্থাৎ সাবজেক্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী খরচেরও কিছুটা তারতম্য হয়। তাই, আর্থিক সামর্থ্যের ব্যাপারটি ভুলে গেলে চলবেনা। আপনি যে পছন্দের সাবজেক্ট পড়তে চাচ্ছেন সেই সাবজেক্টে পড়তে আনুমানিক সকল খরচের হিসেব আপনার সামর্থ্যের সাথে মিলিয়ে নিতে ভুলবেন না।

সমন্বয় এবং অন্যান্য…

যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সাবজেক্ট নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই সর্বোপরি, বিচক্ষণতার সাথে নির্বাচন করতে হবে সঠিক সাবজেক্টটি। পোস্টে উল্লেখিত পরামর্শ ছাড়াও পছন্দের বিষয় নির্বাচনে রয়েছে আরও অনেক ভাবনার বিষয়বস্তু। সেগুলো নিয়েও ভাবুন এবং অবশ্যই সব কিছুর সমন্বয় করেই সিদ্ধান্ত নিবেন। তবেই আপনার সিদ্ধান্ত আপনাকে সঠিক সাবজেক্টটি বেছে নিতে সহায়তা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *